ডেস্ক রিপোর্টঃ দলের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি কমিটি বিলুপ্তির পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল এনেছে বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের দুটি বিলুপ্ত কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে মিশ্র জল্পনা কল্পনা চলছে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে।
বিএনপিতে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন কমিটির নেতৃত্বে নবীনদের আনা হবে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বিলুপ্ত হওয়া মহানগর কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আসা নিয়ে তারা বেশ অস্বস্তিতেও রয়েছেন।
গেল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম মহানগর, বরিশাল মহানগর এবং যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি।
এর কারণ হিসেবে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটির নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সিংহভাগ সিনিয়র নেতার রাজনৈতিক বয়স চল্লিশের কোঠায়। এমন নেতাও রয়েছেন যারা জিয়াউর রহমানের জাগদল থেকে এ দলে সম্পৃক্ত আছেন।
এখন নতুন কমিটির শীর্ষপদে দুজনই যদি জুনিয়র হয় সেক্ষেত্রে সিনিয়রদের রাজনীতি করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তারা বলছেন, দুই মহানগরেই যদি নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হয় তবে রাজনীতি থেকে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতাদের হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে।
এর আগের দেওয়া কমিটিগুলোতেও সিনিয়র-জুনিয়রদের সমন্বয় করা হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র রফিকুল আলম মজনু এবং অপর সিনিয়র নেতা আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে তরুণ নেতা আমিনুল হককে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটি করা হয়েছিল।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি একটি ফাদার সংগঠন। এখানে যদি শীর্ষ দুটি পদেই জুনিয়রদের অধিষ্ঠিত করা হয় তাহলে আমরা ঠিকানাহীন হয়ে পড়ব। আমরা আশা করব, বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিষয়টি আমলে নেবেন।’
মহানগর বিএনপি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ৪৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করেন। সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী ৪১ বছর বিএনপির রাজনীতি করেন। কিছুদিন আগে তারা জেলখেটেও বের হয়েছেন।
বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, হারুন অর রশীদ, মহানগর নেতা অ্যাডভোকেট ফারুক উল ইসলাম, গোলাম হোসেন, আব্দুল কাদির, মকবুল ইসলাম টিপুও প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সূত্র জানায়, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়য়ক আব্দুল আলীম নকি, আনোয়ার উজ্জামান আনোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন মতিসহ সরাফত হোসেন মারফত, ফয়েজ আহমেদ ফুরুর রাজনৈতিক বয়সও চল্লিশের বেশি। এদের মধ্যে আব্দুল আলীম নকি সিনিয়র নেতা হলেও এসব বিষয়ে নাখোশ হয়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।
দুই নগরের এসব সিনিয়র নেতারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বলে জানান নগর বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, এরা প্রত্যেকেই নিজ-নিজ এলাকায় প্রভাবশালী। তাদের অনুসারীরাই আন্দোলনের মাঠে ভূমিকা রেখেছেন। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক একদিনে হননি। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর তাদের এ পদে আসতে হয়।
এ বিষয়ে সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সিংহভাগ থানা ও ওয়ার্ড নেতাদেরও রাজনৈতিক বয়স চল্লিশের ঊর্ধ্বে। সেক্ষেত্রে জুনিয়র নেতাদের মহানগরের মূল দায়িত্ব দিলে সমন্বয় করা কঠিন হবে। এটি তো আর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন নয় যে বানিয়ে দিলেই চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চল্লিশ বছর ধরে বিরামহীন রাজনীতি করলেও আমরা এখনো কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাইনি। সেক্ষেত্রে যদি মহানগর বিএনপিতেও জুনিয়রদের পেছনে রাজনীতি করতে হয় সেক্ষেত্রে অনেক সিনিয়র নেতারা ব্যাকগিয়ারে চলে যাবেন।’
সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়য়ক আনোরুজ্জামান আনোয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঙ্গে যদি সিনিয়র কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সমন্বয় ভালো হবে।’
‘এছাড়া কমিটি করার সময় যদি সিনিয়রিটি মেইনটেইন করা হয় তাহলে সিনিয়রদের জন্য সম্মানজনক হবে। তারপরও তারেক রহমান সাহেব যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমরা সম্মানের সঙ্গে মেনে নেব।’
এ বিষয়ে সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এজিএম শানসুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক সময় এগুলো হয়। হাইকমান্ড দিলে কিছু করার নেই। তবে, আশা করি সবদিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। সেক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় হলে সবাই মূল্যায়িত হবেন।’
ঢাকা দক্ষিণের নেতৃত্বে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষপদে নাম হাবিব উন নবী খান সোহেল, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবিন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি এবং নগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে, আন্দোলনে রাজপথে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল নেতাদেরও প্রাধান্য দিয়ে কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে চায় বিএনপি। বিশেষ করে কর্মীদের মামলা পরিচালনা এবং অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন এমন নেতাদের গুরুত্ব দিতে পারে দলটি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্বে যাদের নাম আসছে
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাইফুল আলম নিরব, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক, এসএম জাহাঙ্গীর, তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মামুন হাসান যদি যুবদলের দায়িত্ব না পান সেক্ষেত্রে তিনিও আসতে পারেন মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষপদে। যুবদলনেতা শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও মহানগর নেতা এবিএম রাজ্জাকও আসতে চাচ্ছেন দায়িত্বশীল পদে।
নতুন কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্ব এবং প্রবীণ ও নবীনদের সমন্বয়ে হবে কি না ঢাকা টাইমস জানতে চেয়েছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে।
জবাবে রিজভী বলেন, ‘সিনিয়র-জুনিয়রদের সমন্বয়েই কমিটি হবে। তারেক রহমান সাহেবের দূরদর্শিতা অবশ্যই আছে। তিনি দলের সিনিয়রদের সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। সামনে যে কমিটি আসবে সেটি আরও বেশি গতিশীল হবে।
Design & Developed BY- zahidit.com
Leave a Reply